ইলেক্টোরাল বন্ড – অনুদানের কোটি লুটোপুটি

দেবাশিস

ইলেক্টোরাল বন্ড কী ও কেন?

এককথায় বললে রাজনৈতিক দল গুলো কে চাঁদা বা ঘুষ দেওয়ার আইনি মোরক হল এই ইলেক্টোরাল বন্ড। বিস্তারিত বলার আগে একটু ইতিহাস টা বলে নি।

চাঁদার ব্যাপারে বিশেষ করে কোম্পানি গুলো অর্থাৎ শিল্পপতিরা যাতে তাদের নিজেদের স্বার্থে তাদের টাকার জোরে কোনো পছন্দমতো রাজনৈতিক দল কে প্রচুর টাকা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে সাহায্য করতে না পারে, তার জন্য কিছু নিয়ন্ত্রণ এনেছিল জহরলাল নেহরু নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকার। সেটা ছিল ১৯৬০ সাল।

সেই নিয়মে বলা হয়, কোনো কোম্পানি কোনো রাজনৈতিক দল কে সর্বোচ্চ ২৫০০০ টাকা বা তার আগের তিন বছরের গড় আয় এর ৫% এর বেশী টাকা দিতে পারবে না। এই সময় বড় কোম্পানি গুলো যেমন টাটা, বিড়লা এরা এই ফান্ডে টাকা দিত আইন মেনে। মূলত এই টাকা যেত কংগ্রেস এর পার্টি ফান্ডেই, (যেহেতু তারা ক্ষমতায় ছিল)।

দ্বিতীয়ত লাভবান হতো স্বতন্ত্র পার্টি।

১৯৬৯ সালে ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বাধীন (কংগ্রেস) সরকার সেই আইন (ধারা ২৯৩-এ) তুলে দিয়ে টাকা দেওয়াকেই বেআইনি ঘোষণা করে। কারণ, কোম্পানি হল ব্যবসাদার। তারা তো আর এমনি এমনি টাকা দেবে না যদি না তাদের কোনো লাভ থাকে।

মূলত কোম্পানি গুলোর সঙ্গে রাজনীতির এই টাকার বিনিময়ে সুবিধা নেওয়ার চক্র টাকে ভাঙ্গার জন্য আর স্বতন্ত্র দল যাতে টাকার যোগানের অভাবে ভোগে তার ব্যবস্থা করতে ইন্দিরা গান্ধী এই সিদ্ধান্ত নেন। এরপর ও রাজনৈতিক দল গুলো টাকা তো পাচ্ছিলই, কিন্তু সেটা বেআইনি ভাবে বা ঘুরপথে।

ভারত বরাবর “জুগার” এর দেশ। যেমন রাজনৈতিক দলগুলো তখন বিভিন্ন ম্যাগাজিন ছাপাতে শুরু করলো আর সেই ম্যাগাজিন এ অ্যাডভার্টাইজমেন্ট দেওয়ার নামে মোটা টাকা পার্টি ফান্ডে ঢুকতে থাকলো। বা বিভিন্ন ব্যবসার লাইসেন্স দেওয়ার বিনিময়ে টাকার লেনদেন শুরু হল।

রাজনৈতিক দল বা নেতাদের এইসব বেআইনি প্রাকটিস গুলো বন্ধ করার উদ্দেশ্যে ১৯৮৫ সালে রাজীব গান্ধীর নেতৃত্বাধীন (কংগ্রেস) সরকার আবার ওই নিয়মটি ফিরিয়ে আনেন। অবশ্য বলা হয় যে, যে কোম্পানি টাকা দেবে সেই কোম্পানি কে অন্তত তিন বছরের পুরোনো হতে হবে। কারণ, হঠাৎ গজিয়ে ওঠা কোনো কোম্পানি বা নূতন শুরু হওয়া কোনো কোম্পানি টাকা দেওয়া মানে তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থ টাই সেখানে মুখ্য হওয়ার সম্ভাবনা বেশী।

৫% এর হিসাব টা কিন্তু থেকেই গেল। কিন্তু যে যা অনুদান দেবে ২০০০০ টাকার বেশী অনুদান যারা দেবে আর যারা নেবে তাদের সেই হিসাব নাম পরিচয় সহ নির্বাচন কমিশনে জানাতে হবে। এভাবেই চলছিল।

মোদি সরকারের ভূমিকা

নরেন্দ্র মোদির (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় এসেই এই নিয়মটা পাল্টে ৫% থেকে বাড়িয়ে প্রথমে ৭.৫% করলো। অর্থাৎ কোম্পানি গুলো যাতে রাজনৈতিক দল গুলোকে আরো বেশী বেশী করে টাকা দিতে পারে মোদিজি তার ব্যবস্থা করলেন। এতে সবথেকে বেশী লাভবান অবশ্যই ক্ষমতাসীন দল হিসাবে বিজেপির।

এরপর, আরো টাকার লোভে ২০১৭ সালে ফিনান্স বিল এ মোদিজী ওই ৭.৫% এর সীমা টাও তুলে দিলেন অর্থাৎ কোম্পানিগুলো চাইলে যতোখুশি টাকা দিতে পারে। শুধু তাই না ২০১৮ সালে ফিনান্স বিল এর মাধ্যমে বিদেশি কোম্পানি গুলোর জন্যও টাকা দেওয়ার ছাড়পত্র দিয়ে দিলেন। এর আগে শুধুমাত্র ভারতীয় কোম্পানি গুলোই টাকা দিতে পারতো।

তবে এতোদিন নিয়ম ছিল পার্টি গুলো পাবলিকলি জানাতে বাধ্য থাকবে, তারা কার কাছ থেকে কতো টাকা পেয়েছে। কিন্তু মোদিজী সেই নিয়মটাও পাল্টে দিলেন এই ইলেক্টোরাল বন্ড এর নামে।

কি বললেন ইলেক্টোরাল বন্ডে? বললেন স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া থেকে ১০০০ টাকা, ১০০০০ টাকা, ১ লক্ষ টাকা, ১০ লক্ষ টাকা বা ১ কোটি টাকার বন্ড কিনে পছন্দ মতো পার্টি কে দিলে পার্টী সেই বন্ড টা ব্যাংকে ভাঙিয়ে টাকাটা তুলে নিতে পারবে। ইলেক্টোরাল বন্ড অনেকটা ব্যাংকের ডিমান্ড ড্রাফট এর মতো ব্যাপার। পার্থক্য এই, যে এক্ষেত্রে কে টাকা দিচ্ছে তার নাম প্রকাশ্যে আসবে না।

অর্থাৎ কুপন কাটার মতো। আপনি স্টেট ব্যাংকে গিয়ে ১ লাখ টাকা দিলেন, বিনিময়ে একটা বন্ড পেপার পেলেন মানে একটা কুপন পেলেন ১ লাখ টাকার। যে কুপনে আপনার নাম নাই। এরপর আপনি সেই কুপন আপনার পছন্দের রাজনৈতিক দল কে দিলেন। সেই রাজনৈতিক দল সেই কুপন স্টেট ব্যাংকে জমা দিলেই সেই দল ওই ১ লাখ টাকা পেয়ে যাবে।

শুধু তাই না ২০১৮ সালে ফিনান্স বিল এর মাধ্যমে ভারতে রেজিষ্টার্ড বিদেশি কোম্পানি গুলোর জন্যও টাকা দেওয়ার ছাড়পত্র দিয়ে দিলেন মহান দেশভক্ত মোদিজী। এর আগে শুধুমাত্র ভারতীয় কোম্পানি গুলোই টাকা দিতে পারতো।


ওষুধের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণ কি বুঝতে পারছেন ?
ক্ষতিগ্রস্ত যারা হচ্ছেন তাদের ৮০% কিন্তু হিন্দু | (কারণ দেশের ৮০% মানুষ হিন্দু ধর্মাবলম্বী |)
“মিত্রোঅঁঅঁ হিন্দু খত্রে মে হ্যাঁয়”

ইলেক্টোরাল বন্ডে সমস্যা কোথায়?

মূল সমস্যা ধনিকতন্ত্র বা plutocracy। অর্থাৎ ধনী ব্যক্তি দের দ্বারা দেশের রাজনীতি বা সরকার পরিচালনার ক্ষমতা কুক্ষিগত করে ফেলা। এটা যেকোনো দেশের গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর, কারণ এতে এই ধনী ব্যক্তিরা তাদের ব্যবসার স্বার্থে অর্থাৎ অধিক মুনাফার স্বার্থে টাকার বিনিময়ে সরকার কে ব্যবহার করবে আর গরীব সাধারণ মানুষের স্বার্থ ক্ষুন্ন হবে। আপনার ১০০ দিনের কাজের মজুরি বাড়বে না বা শ্রমিকের ন্যুনতম বেতন বাড়বে না। সরকার কৃষকের স্বার্থ শ্রমিকের স্বার্থ অনুযায়ী আইন তৈরী করবে না বা প্রকল্প গ্রহণ করবে না। বরং সরকার ওই শিল্পপতি দের স্বার্থে আইন আনবে। পাশাপাশি, সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকার কোনো প্রজেক্ট এর জন্য ঘুষ দেওয়া নেওয়া হতে পারে এই বন্ড এর মাধ্যমে যেহেতু এই বন্ড এর নিয়ম অনুযায়ী ঘুষ প্রদানকারীর নাম প্রকাশ্যে আসবে না। বিদেশি কোম্পানি দের ও এই বন্ড কেনার অধিকার দেওয়ায় আমাদের দেশের সরকার পরিচালনায় বিদেশি সংস্থার প্রভাব বাড়তে পারে যাতে সার্বিক ভাবে দেশের সুরক্ষা বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরী হবে।

আর একটা সমস্যা হল এই ধনী ব্যক্তি রা বা কোম্পানির মালিক রা সেই সব দল কেই টাকা দেবে যারা ক্ষমতায় আছে বা আসতে পারে। এতে ছোট ছোট দল গুলি নির্বাচনে টাকা খরচের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পরবে আর তাদের অস্তিত্ব সংকটে পরবে। ফলে এই অসম প্রতিযোগিতায় কয়েকটি বড় দল ই টিকে থাকবে। রাজনীতিও মোনোপলির দিকে এগিয়ে যাবে অর্থাৎ সাধারণ মানুষের তাদের পছন্দ মতো রাজনৈতিক দল কে নির্বাচন করার অপশন কমবে। যেটা গণ তন্রের জন্য খুবই ক্ষতিকর।

আবার এমন ও হতে পারে যে সরকারে ক্ষমতায় যে দল আছে তারা চাপ দিয়ে বা ভয় দেখিয়ে এই সব কোম্পানি র কাছ থেকে তোলা আদায় করতে পারে। এই সব কারণে সব থেকে ক্ষতির মুখে পরবে সাধারণ মানুষ। কিভাবে? ধরুন একটা ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি কে চাপে পরে (এমনি এমনি কে আর দিতে চায় বলুন!) ১০০ কোটি টাকার বন্ড কিনে রাজনৈতিক দল কে দিতে হল, তাহলে সেই কোম্পানি সেই টাকা টা বাজার থেকে তোলার জন্য ওষূধের দাম বাড়িয়ে দেবে। বা ধরুন কোনো হাসপাতাল কে ৮০ কোটি টাকা দিতে হল তাহলে সেই হাসপাতাল রোগী দের বিল অনেকটা বাড়িয়ে দেবে।

বা কোনো কোম্পানি কে ১০০ কোটি টাকা দিয়ে ১০০০ কোটি টাকার ব্রিজ বানানোর বরাত পেল তাহলে সেই কোম্পানি সেই টাকা তোলার জন্য খারাপ কোয়ালিটি র মাল দিয়ে ব্রিজ বানাবে। বা ইলেক্টিসিটী কোম্পানি কে যদি মোটা টাকা চাঁদা দিতে হয় তাহলে সে ইলেক্ট্রিসিটি র দাম বাড়িয়ে দেবে ফলে আমার আপনার বাড়ির ইলেক্ট্রিক বিল বেশী আসবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম এভাবে বাড়বে। অর্থাৎ এই টাকার বোঝা আসলে সাধারণ মানুষের ঘাড়েই পড়বে। তাই “এটা বড় বড় শিল্পপতি দের ব্যাপার, ওদের টাকা আছে তাই দিচ্ছে। আমার কি? ” এরকম ভাবছেন যদি তাহলে ভুল ভাবছেন।

আপনি আবার এটাও ভাবতে পারেন যে এই ইলেক্টোরাল বন্ড না থাকলে কি কোম্পানি গুলো ঘুষ দিত না? অবশ্যই দিত। কিন্তু মোটা টাকা পার্টিফান্ডে দিলে সেটা যেহেতু হিসাব দিতে হতো ঘুষ নেওয়া টা একটা সীমার মধ্যে থাকত, নাহলে আয়কর দপ্তরের তদন্তের আওতায় পড়তে হতো। কিন্তু এই ইলেক্টোরাল বন্ড এই ঘুষ দেওয়ার নিয়ম কে আইনি মর্যাদা দিয়ে দিল কারণ এতে যতো খুশি টাকা ঘুষ দেওয়া যাবে কিন্তু তার নামও প্রকাশ্যে আসবে না আর কোনো আয়কর তদন্তের আওতাতেও আসতে হবে না।


সুপ্রিম কোর্ট ও বর্তমান বিতর্ক

এই ইলেক্টোরাল বন্ড চালু হওয়ার পর ভারতের বিভিন্ন দল এর সুবিধা নিলেও একমাত্র দল সিপিআই(এম) এই বন্ডের মাধ্যমে টাকা নেওয়া থেকে দূরে থাকে। তাদের মতে এই ইলেক্টোরাল বন্ড অসাংবিধানিক ও অনৈতিক। সিপিআই(এম) বরাবর ই কোম্পানির থেকে চাঁদা নেওয়ার বিপক্ষে। সিপিআই(এম) শুধুমাত্র এই বন্ডের মাধ্যমে টাকা নেওয়া থেকে দূরে থাকেনি, একমাত্র রাজনৈতিক দল হিসাবে সুপ্রিম কোর্টে এই বন্ডের বিরুদ্ধে কেস ফাইল করে। সেই কেস এরই শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্ট পরিষ্কার করে বলে যে এই ইলেক্টোরাল বন্ড সম্পূর্ণ ভাবে অসাংবিধানিক ও বেআইনি।

শুধু তাই না, সুপ্রিম কোর্ট এটাও বলে যে ভারতের নাগরিক তথা ভোটার দের জানার অধিকার আছে কারা কোন পার্টি কে কতো টাকা এই ইলেক্টোরাল বন্ড এর মাধ্যমে দান করেছে। কারণ নির্বাচন একটা সাংবিধানিক প্রক্রিয়া। সুপ্রিম কোর্ট এর মতে নির্বাচনে ব্যবহৃত টাকার এই গোপনীয়তা অর্থাৎ চাঁদা দাতার পরিচয় অর্থাৎ টাকার উৎস সম্পর্কে গোপনীয়তা সাধারণ মানুষের তথ্য জানার অধিকার কে লঙ্ঘন করে।

যেহেতু এই ইলেক্টোরাল বন্ড শুধুমাত্র স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া থেকেই বিক্রী হচ্ছিল সুপ্রিম কোর্ট স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া কে নির্দেশ দেয় এই সংক্রান্ত সকল তথ্য নির্বাচন কমিশনে জমা করতে আর নির্বাচন কমিশন কে নির্দেশ দেয় সেই তথ্য সাধারণ মানুষের কাছে প্রকাশ করতে। রাজনৈতিক চাপে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া প্রথমে তথ্য দিতে দেরী করার চেষ্টা কলেও সুপ্রিম কোর্ট এব্যাপারে কড়া অবস্থান নিয়ে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া কে বাধ্য করে এই তথ্য প্রকাশ করতে।

  

কে কাকে কেন কতো চাঁদা দিলেন?

কে কাকে কেন কতো চাঁদা দিলেন সে তথ্য সম্পূর্ণ আসতে আর একটু সময় লাগবে। তবে এখনও পর্যন্ত স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া তথ্য প্রকাশের পর কি দেখা গেল? দেখা গেল বিজেপি সবচেয়ে বেশী টাকা চাঁদা পেয়েছে যার পরিমান ৬,৯৮৬ কোটি টাকা। দ্বিতীয় স্থানে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় থাকা তৃণমূল কংগ্রেস ১৬০৯ কোটি টাকা। তৃতীয় স্থানে কংগ্রেস ১৩৩৪ কোটি টাকা। চতুর্থ স্থানে তেলেঙ্গানায় ক্ষমতায় থাকা ভারত রাষ্ট্র সমিতি ১৩২২ কোটি টাকা, পঞ্চম স্থানে ওড়িশায় ক্ষমতায় থাকা বিজেডি ৯৪৪ কোটি টাকা, ষষ্ঠ স্থানে তামিলনাড়ু তে ক্ষমতায় থাকা ডি.এম.কে ৬৫৬ কোটি টাকা, অন্ধ্রপ্রদেশে ক্ষমতায় থাকা ওয়াই.এস.আর ৪৪২ কোটি টাকা। অদ্ভুত ভাবে ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের আগেই বিজেপি পায় ১৭৭১ কোটি টাকার অনুদান। ২০২৩ সালে বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা ভোটের আগে ১১৩৯ কোটি টাকা পায় বিজেপি। আপনারা জানেন ওই সময় বিভিন্ন রাজ্যে ঘোড়া কেনাবেচা চলছিল। তার জন্য প্রচুর কোটি কোটি টাকা লেগেছে। অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেস, যারা বলে ছবি বিক্রী করে পার্টি চালায় তারা ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গে জেতার পর তৃণমূল পায় ২৯২ কোটি টাকা, ২০২২ এ ৪৬৮ কোটি টাকা, ২০২৩ সালে ৫৬২ কোটি টাকা পায়। আর শুনলে অবাক হবেন, শুধুমাত্র অর্থাৎ এবছর ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসেই ১৩০ কোটি টাকা পায় তৃণমূল। কংগ্রেস ২০১৯ এ পায় ১৭২ কোটি, ২০২২ সালে ১২৭ কোটি, ২০২৩ সালে ৭৮০ কোটি টাকা

এ তো গেল চাঁদা পাওয়ার হিসাব। এবার আসি চাঁদা দেওয়ার কিছু উদাহরণ।

সব থেকে বেশী টাকা চাঁদা দিয়েছে, ডিয়ার লটারি খ্যাত ফিউচার গেমিং এন্ড হোটেল সার্ভিস নামে একটা কোম্পানি, প্রায় ১৩৬৮ কোটি টাকা। এই কোম্পানির মালিক সান্তিয়াগোর বিরুদ্ধে সিকিম সরকার ৪৫০০ কোটি টাকার প্রতাণার মামলা আছে। সান্তিয়াগো প্রায় ৮ মাস জেল ও খেটেছে। তাছাড়াও ইডি ও সিবিআই এই কোম্পানির অফিসে রেড করেছে। অদ্ভুত ভাবে এই কোম্পানি বন্ড কেনার পর থেকে ইডি সিবিআই বা কোনো সংস্থা ই আর কড়া ব্যবস্থা নেয় নি বরং সারা দেশে চুটিয়ে তার লটারি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। আর লাখ লাখ গরীব মানুষ এই লটারির চক্করে পরে প্রতিদিন নিঃস্ব হচ্ছে। সরকার চাঁদা নিয়ে এদের এই কারবার চালিয়ে যাবার অনুমতি দিয়ে রেখেছে। এদের আবার বার্ষিক লাভ ২১৫ কোটি টাকা কিন্তু অনুদান ১৩৬৮ কোটি।

দ্বিতীয় উদাহরণ মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি যারা ৯৬৬ কোটি টাকা চাঁদা দিয়েছে। অদ্ভূত ভাবে এই কোম্পানি বন্ড কেনার কয়েক দিন এর মধ্যেই টানেল তৈরীর (যে টানেলের মধ্যে শ্রমিকরা আটকে গেছিলেন কিছুদিন আগে) ১৪৪০০ কোটি টাকার টেন্ডার পেয়ে যায়।

তৃতীয় উদাহরণ কুয়িক সাপ্লাই চেন কোম্পানি যারা রিলায়েন্স এর ঘনিষ্ঠ তারা চাঁদা দেয় ৪১০ কোটি টাকার যেখানে তার বার্ষিক লাভ ১০৯ কোটি টাকা। তাছাড়া বেদান্ত ৮০০ কোটি, হলদিয়া ৩৭৭ কোটি, এসেল মাইনিং ২২৪ কোটি, এয়ারটেল ১৮৩ কোটি, জিন্দাল স্টিল ১২৩ কোটি চাঁদা দিয়েছে।

আরও দুটো কোম্পানির কথা জানলে অবাক হয়ে যাবেন – এম.কে.জে এন্টারপ্রাইজ যার বাৎসরিক আয় ৫৮ কোটি তারা অনুদান দিয়েছে ১৯২ কোটি টাকার, মদনলাল লিমিটেড বার্ষিক আয় ১০ কোটি কিন্তু অনুদান দিয়েছে ১৮৩ কোটি টাকা।

কলকাতার আই.এফ.বি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ ১৭৫ কোটি টাকা লাভ করে ৯২ কোটি টাকা দান করেছে। কাকে করেছে বুঝে নিন। আরও বুঝে নিন মোদি সরকার এর নুতন নিয়মে কেন ৭.৫% এর সীমা তোলা হয়েছিল, কেন নাম গোপন করা হয়েছিল। কার লাভ হল, কিসের বিনিময়ে হল |

   

লোপাট অরণ্য, আর কুয়াশাঘেরা টক্সিক লেকের মাঝে সেই ঘোড়াটা দাঁড়িয়ে আছে

ইলেক্টোরাল বন্ডের ডেটাগুলো দেখছিলাম। দেখতে পাচ্ছিলাম বেদান্তর নাম। নিয়মগিরির ইতিহাস। লাঞ্জিগড় রিফাইনারির ৫০ মিলিয়ন টন বিষাক্ত লাল কাদা। লাঞ্জিগরের বাচ্চাগুলোর চামড়ায় গোল গোল দাগ। শ্বাস নিতে পারে না। বেদান্ত দিয়েছে ৪০০.৬৫ কোটি। ওড়িশার উৎকল অ্যালুমিনা প্রাইভেট লিমিটেড। ওড়িশার বাফলিমালি পাহাড়ের বক্সাইট মাইনিং। সেই টক্সিক রেড মাড।

উৎকল অ্যালুমিনার পাশে লেখা ১৪৫ কোটি। জিন্দাল গ্রুপ। ছত্তিশগড়ের রায়গড় বা বারমেরের ভদ্রা গ্রামে ৮০০০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ ও মাইনিং। জিন্দাল দিয়েছে ১৫৩ কোটি। এবং তেলেঙ্গানার গোদাবরী নদীর ওপরে বিতর্কিত কলেশ্বরম লিফট ইরিগেশন প্রোজেক্টের সঙ্গে জড়িত হায়দ্রাবাদের মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং-এর পাশে লেখা ৯৬৬ কোটি। কলেশ্বরম প্রোজেক্ট সুপ্রিম কোর্ট থেকে স্টে অর্ডারে আপাতত আটকে।

অন্য একভাবে হিসেব করি? বেদান্ত, রুংটা সন্স, ইএমআইএল, জিন্দাল ও ডেম্পো মিলে দিয়েছে মোট ৮৫০ কোটি। এবং এই পাঁচটি মাইনিং ও ইস্পাত জায়ান্টের খান দশেক প্রোজেক্ট গ্রিন ক্লিয়ারেন্সের জন্য আটকে আছে মন্ত্রকে। মনে পড়ছে ঝাড়খণ্ডের সারান্ডা অরণ্যের রুংটা মাইনিং-এ কাটা ১০০ হেক্টর গাছ। এলিফ্যান্ট করিডর। ট্রাইবাল রাইট। লাল মাটি। ‘দ্য রোড নট টেকেন …’

আদানির গ্রুপের ছ ছটি প্রোজেক্ট এখনও গ্রিন ক্লিয়ারেন্স পায়নি, যার মধ্যে একটি কোর বায়োডাইভারসিটি হটস্পট ওয়েস্টার্ন ঘাটের ১৫০০ মেগাওয়াটের তারালি ইরিগেশন প্রোজেক্ট, যা ক্লিয়ারেন্স পেলে ১০০ হেক্টর গাছ বাদ চলে যাচ্ছে। দেশের পরিবেশ মন্ত্রকের এক্সপার্ট অ্যাপ্রেইসাল কমিটিতে এলেন আদানি গ্রুপের একজন প্রধান পরামর্শদাতা। ‘অ্যান্ড আই হ্যাভ প্রমিসেস টু কিপ …’

২৬ মার্চ সামনে রবার্ট ফ্রস্টের জন্মদিন। ‘দ্য উডস আর লাভলি, ডার্ক অ্যান্ড ডিপ’।

লোপাট অরণ্য, আর কুয়াশাঘেরা টক্সিক লেকের মাঝে সেই ঘোড়াটা দাঁড়িয়ে আছে। ‘দ্য ডারকেস্ট ইভনিং অফ দ্য ইয়ার …’

But I have promises to keep,

And miles to go before I sleep,   

And miles to go before I sleep.

References

Judicial References | Election Commission of India (eci.gov.in)

Gofile – Your all-in-one storage solution

https://www.indialawjournal.org/electoral-bond-scheme-the-paragon-of-paradoxe.php

https://retail.onlinesbi.sbi/documents/Gazette.pdf

https://www.business-standard.com/politics/never-accepted-any-electoral-bonds-funding-always-opposed-it-cpi-m-124021600713_1.html

https://www.amnesty.org/en/latest/news/2011/06/india-toxic-sludge-leak-vedantas-red-mud-pond-threatens-rural-communities

Leave a comment